নগরডেক্স: মধ্য গাজায় একটি পানি সংগ্রহ কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়টিই শিশু। আহত হন অন্তত ১৬ জন।
রোববার গাজা সিটির বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও শরণার্থীশিবিরে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ দিন শুধু গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫২ জন। এর মধ্যে, নুসেইরাহ শরণার্থীশিবিরে পানি বিতরণ কেন্দ্র লক্ষ্য করে চালানো হামলায় নিহত হন ১০ জন।
আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, গাজাজুড়ে ভয়াবহ পানি সংকট চলছে। তিনি বলেন, গাজায় যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই দূষিত ও লবণাক্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই দূষিত-লবণাক্ত পানি নিতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন গাজার বাসিন্দারা। গত কয়েক মাসে অন্তত দশবার সরাসরি এ ধরনের আক্রমণের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
একই দিনে, ইসরাইলি বিমান হামলায় রাফাহর গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরও ৩৪ ফিলিস্তিনি। মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে সেখানে ইসরাইলি হামলায় ইতিমধ্যে প্রায় ৮০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত এ সংস্থাটির একচেটিয়া ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মানবিক সংস্থা। জাতিসংঘের মতো দক্ষ ও বিশ্বস্ত সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে জিএইচএফের মতো অসংগঠিত একটি সংস্থা ত্রাণ বিতরণ চালানোয় বিশৃঙ্খলা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে কমপক্ষে ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গাজাকে কার্যত অবরোধই করে রেখেছে ইসরাইলি প্রশাসন। ত্রাণ সহায়তার নামে প্রতিদিন মানুষ মারছে ইসরাইলি বাহিনী।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র তথ্যমতে, গাজায় চলমান অবরোধ পেরিয়েছে ১০৩তম দিন। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অপুষ্টি। শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে আরও ভয়ংকর বিপর্যয় নেমে আসবে।
এক বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গাজায় তাদের একটি ক্লিনিকে মার্চ মাস থেকে অপুষ্টিজনিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অথচ সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করাতে পারেনি।
রোববারও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। নুসেইরাহের আল-সাওয়ারকা এলাকায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় নিহত হন ১০ জন। গাজা সিটির পশ্চিমে শাতি শরণার্থীশিবিরেও একটি বাড়িতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ওই হামলায় প্রাণ হারান ছয়জন। আরও পাঁচজন নিহত হয়েছে গাজার পশ্চিমাঞ্চলের হামিদ স্ট্রিটে। গাজার সাবরা এলাকায়ও একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ওই হামলায় নিহত হয়েছেন দুজন, যাদের মধ্যে একটি শিশু। খান ইউনিস শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু লক্ষ্য করে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় একাধিক আবাসিক ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
এ হামলাগুলো এমন সময় চালানো হচ্ছে, যখন কাতারে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যস্থতায় এক সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির আলোচনা কার্যত ভেস্তে গেছে। তবে ট্রাম্প সোমবার ফের আশ্বাস দিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতি অতি নিকটে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। প্রায় ২১ মাস ধরে চলা এ যুদ্ধ বন্ধে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
নগরবার্তা২৪/মিল্লাত