আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যবহার করে আজ ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক চরিত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্যা গালিব।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়াম (আইআরডিসি) আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব ও আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের চেতনার রাজনৈতিক ব্যবহারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যেভাবে ফ্যাসিবাদে প্রবেশ করেছে, তেমনি আগামীতে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রকে ব্যবহার করে এনসিপিও ফ্যাসিস্ট রূপ নিতে পারে।”
ছাত্ররাজনীতিতে আদর্শহীনতা ও পেশিশক্তির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু মাসেল পাওয়ার নির্ভর রাজনীতি হলে তা বন্ধ করা জরুরি। কারণ আদর্শহীন ছাত্ররাজনীতি ছাত্রসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।”
ড. গালিব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ— কোনো বিদেশি শক্তি নয়।”
তিনি ‘জুলাই বিপ্লব’কে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জুলাইয়ের পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এর ঘোষণাপত্রের আলোকে এগিয়ে যাওয়াই এখন সময়ের দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতান্ত্রিক অভ্যন্তরীণ নির্বাচন চালু করাই গণতন্ত্রের ভিত্তি। মনোনয়ন নির্ভর নয়, সদস্যদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন হতে হবে।”
ভোটের সংস্কৃতি পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যোগ্যতা দেখে ভোট দেওয়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে— প্রতীক নয়, ব্যক্তির দক্ষতাই হোক ভোটের মানদণ্ড।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল ৫২ ও ৭১-এর ধারাবাহিকতায় একটি রাজনৈতিক অনিবার্যতা। ২৪-এর নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল, যার প্রতিক্রিয়াতেই গড়ে ওঠে জুলাইয়ের অভ্যুত্থান।”
তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল তরুণ, ছাত্র ও নারী সমাজ। তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমেছিল এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে দেয়। আগামীর বাংলাদেশে আমাদের সেই চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “জুলাই আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। অতীতে আমরা যে সুযোগগুলো হারিয়েছি, এবার সেই শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভালো শাসক ও ভালো নাগরিক গড়তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইআরডিসি-এর সাধারণ সম্পাদক ও জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক এবং সভাপতিত্ব করেন আইআরডিসি সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হেসাইন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জবি ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমীন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।