দলকানা কুশিক্ষক ও শিক্ষাঙ্গনের নন্দিত অবস্থা: সাবেক ছাত্রের অভিজ্ঞতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাঙ্গনে বিদ্যমান দলবাজী ও কুশিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলগত প্রভাব এবং কুশিক্ষকদের দুঃশাসনের প্রমাণ স্পষ্ট। এর ফলে অনেক শিক্ষকের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে, যারা মূলত নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের নির্বাচনে জয়ের জন্য অবৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আমার কাছে বিশেষ করে একজন শিক্ষক—মাফরুহী সাত্তার, যিনি ভাসানী হলের প্রভোস্ট ছিলেন, তাদের চরিত্র একনাগাড়ে দলের স্বার্থ সাধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। আমি ভাসানী হলের ছাত্র থাকাকালীন তিনি ছিলেন ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং হলের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। উদাহরণস্বরূপ, তখন ডাইনিং হলের খাবারের দাম ছিল ৮ টাকা, যা হঠাৎ করে ১২ টাকা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ছাত্রদলের ক্যাডারা তাদের নেশার আড়ালে সন্ত্রাস ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে প্রতিবাদ দমন করেছিল। এমনকি প্রভোস্ট নিজেই এই সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করতেন, তাদের সঙ্গে বসে চা-নাস্তা খেতেন, যা শিক্ষক হিসেবে তার পেশাদারিত্বের প্রতি আমার বিশ্বাস নস্যাৎ করে।

সংবাদে দেখা গেছে, এক দলকানা কুশিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যিনি পদত্যাগ করেছেন। সাংবাদিকদের সামনে তিনি অভিযোগ করেছেন নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে, কিন্তু বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এমন অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, নির্বাচনে যদি অনিয়ম থাকে, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি কী কারণে তা প্রতিহত করেননি? নিঃসন্দেহে, এটি শিক্ষাঙ্গনের প্রতি তার দায়িত্বের প্রতি অবহেলার প্রতিফলন।নির্বাচনে এর প্রমাণ হিসেবে কমিটি গঠন ও ভোটগ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে।

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলবাজির ছায়া ছিল স্পষ্ট, যা প্রমাণিত হয়েছে কিছু দলকানা কুশিক্ষকের দুর্নীতির মাধ্যমে। দলীয় ক্যাডারদের ভোট চুরি করে জয়ী করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারা নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গনে এমন দলবাজি ও দুর্নীতির ঘটনা শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ও আশা কেড়ে নিচ্ছে। শিক্ষকরা দলের স্বার্থে কাজ করে শিক্ষার গুণগত মান ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণের অবহেলা করছেন।

৩৩ বছর পরেও আমাদের ছাত্রদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এই ধরনের দলকানা কুশিক্ষকরা ছিনিমিনি খেলছেন। আমাদের ভবিষ্যতের এই শিক্ষার্থীদের জন্য সুশিক্ষা ও ন্যায়পরায়ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে মুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ছাত্রদের বিষয়ে শিক্ষক রাজনীতি নয়, শিক্ষার উন্নতি হওয়া উচিত।

একজন সাবেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, শিক্ষাঙ্গনের সুশাসনের জন্য দলবাজি ও কুশিক্ষকদের অবদানকে নিঃসন্দেহে খণ্ডন করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *