একের পর এক অপহরণের নেপথ্যে আরাকান আর্মি

কক্সবাজারের টেকনাফের নদী আর সাগরের জলরাশি যেন নিখোঁজ হওয়ার গল্প। যেখানে মাছ ধরতে গিয়ে হরহামেশাই হারিয়ে যান জেলেরা। গত ৯ মাসে এমন ২২৮ জনকে অপহরণের নেপথ্যে রয়েছে আরাকান আর্মির তৎপরতা।

নাফ নদীর জলে জীবন চলে টেকনাফের বহু মানুষের। এপাড় থেকে দেখলে জল আর জেলেদের এই মিতালি খোরাক জোগায় নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের। কিন্তু ওপাড়ে আছে নানা অপরাধের গল্প।মাছ ধরতে নেমে হরহামেশাই নিখোঁজ হয়ে যান জেলেরা। দীর্ঘ অপেক্ষাতেও কেউ কেউ আর ফিরে আসেন না।

শাহপরীর দ্বীপে বহু বছর ধরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন মাহমুদুল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার জীবনে ঘটে গেছে ১৭ দিনের বিভীষিকা। তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চায় আরাকান আর্মি।

মাহমুদুল বলেন, ওরা আমাদের দেশের বিজিবি কোন জায়গায় ডিউটি করে, শাহপরীর দ্বীপে বাহিনীর কতটি ক্যাম্প আছে, কোথায় কোথায় ডিউটি করে এসব জানতে চাইছিল।

কেবল মিয়ানমারের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, এদেশের কেউ কেউও অপহরণের নাটক সাজিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন মাদক কারবারে।

মাহমুদুল আরও বলেন, তারা বলে আমাদের জন্য মাল আনবা, আমরা তোমাদের ইয়াবা দেব। মাল থেকে যেমন লাভ করবে, ইয়াবা থেকেও তেমনি লাভ করবে। চাল, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ- সবকিছু ওদের চাহিদা।

তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে গন্তব্য ছিল পাশের এলাকার একটি পরিবার। সেখানে তৈরি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। এই নারীর স্বামী বহুদিন ধরে মিয়ানমারে আরাকান আর্মির হাতে বন্দি।

অপহৃত জেলের একমাত্র সন্তানের আর্তনাদ আরেকবার শুধু ‘বাবা’ বলে ডাকতে চায় সে। কিন্তু পরিবারটি জানে না কী ঘটেছে তার ভাগ্যে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২২৮ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। তাদের মধ্যে ৯৫ জন বাঙালি আর ১৩৩ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ১২৪ জনকে ফেরত এনেছে বিজিবি। এখনো আরাকান আর্মির হাতে বন্দি আছেন ১০৪ জন।

বিজিবি জানায়, ওই জেলেদের অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা।

বিজিবির এক সিও বলেন, জেলে ছদ্মবেশে বা আটকের মতো বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে পাঁচ-সাত দিনের জন্য ওপারে অবস্থান করার ঘটনাও আমরা দেখেছি। প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু জেলে আর্থিক মুনাফার প্রলোভনে এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তাদেরও আমরা চিহ্নিত করছি।

টেকনাফে বাংলাদেশি জেলে ও রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *