জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান এবং সে সনদের ভিত্তিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
শুক্রবার(৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাড্ডা থানা জামায়াত আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত ও ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যা ও দূর্নীতির বিচার দৃশ্যমান সহ ৫ দফা দাবি আদায়ে আয়োজিত এক গণসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাড্ডা উত্তর থানা জামায়াতে আমীর মাওলানা কুতুব উদ্দীনের সভাপতিত্ব ও বাড্ডা পশ্চিম থানা আমীর আব্দুস সবুর ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশরনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১১ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট আতিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১১ সংসদীয় আসনের থানা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ। সমাবেশ শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সামনে নতুন সম্ভবনা দেখা দিলেও মহল বিশেষের ক্ষমতালিপ্সা ও অহমিকার কারণে সে সম্ভবনার অপমৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের আস্কারা পেয়েই দেশ এখন চাঁদাবাজ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা এখন পতিত স্বৈরাচারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতি ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা না করে জিহ্বা কাটা সহ নানাবিধ হুমকী-ধামকি দিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত।এতে প্রমাণ হয় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে পারেনি বরং নির্বাচনী ব্যবস্থা সে অশুভ বৃত্তিতেই রয়ে গেছে।
তিনি জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি না দিলে তা ‘কিতাবে আছে; গোয়ালে নেই’ বলে বিবেচিত হবে। ফলে এ সনদ শুধু কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাস্তবে এর কোন কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের পুরো কার্যক্রম অবৈধ ও অসাংবিধানিক হয়ে পড়বে। বেআইনী হয়ে পড়বে জুলাই বিপ্লবও। ফলে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মাথাচাঁরা দেওয়ার নতুন করে সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি জুলাই সনদকে সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস সহ রাষ্ট্রীয় সকল অবকাঠামোকে ধ্বংস করেছে। তাই দেশে সুশাসন ও নাগরিকদের সকল অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কার্যকর সংস্কার করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করলেই চলবে না বরং জাতীয় পার্টি সহ স্বৈরাচারের সকল দোসরদের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। আর সকল নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন ও গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হতে হবে। একই সাথে জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না হলে এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবেনা। আর দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে জামায়াত ৫ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছে। মূলত, এসব দাবি এখন রীতিমত গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি গণদাবি মেনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে ত্রয়োদশ সংসদের অনুষ্ঠানের আহবান জানান।
