স্বর্ণের দাম ছুঁয়েছে দুই লাখ: সোনা ছাড়া বিয়ের সংস্কৃতি গড়ার আহ্বান

দেশে স্বর্ণের ভরি এক লাখ আটানব্বই হাজার টাকায় পৌঁছেছে—অর্থাৎ প্রায় দুই লাখ টাকা। ক্রমবর্ধমান এই দামের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সাধারণ পরিবারগুলো পড়ছে চরম বিপাকে। বিশেষ করে বিয়ের আয়োজনের সময় সোনাকে “অবশ্যক” ধরা সামাজিক প্রবণতা এখন পরিণত হয়েছে এক ভারী বোঝায়।

এক সময় পাঁচ হাজার টাকায় এক ভরি সোনা কেনা যেত। কিন্তু আজ সেই সোনা অনেকের জন্য স্বপ্নের বস্তু। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য কন্যাদান যেন হয়ে উঠেছে এক আর্থিক সংগ্রাম। সমাজে “সোনা ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ” এই ধারণাই এখন অনেক পরিবারের দুশ্চিন্তার মূল কারণ।

বিজ্ঞ গুণীজনদের মতে, বিয়েতে সোনার ব্যবহার এখন শুধুমাত্র ঐতিহ্যের অংশ নয়, বরং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কে কাকে কত ভরি সোনা উপহার দেবে, কে কেমন দামী গয়না পরবে – এই প্রতিযোগিতা সাধারণ পরিবারের জন্য এক প্রকার মানসিক নির্যাতনে পরিণত হয়েছে।

একজন সমাজ সচেতন তরুণ ইব্রাহিম আইয়ুবী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন,“গোল্ড মানুষ নিয়মিত পরতে পারে না, এতোটা রিস্কি জিনিস! অথচ সেটাকেই বিয়ের মূল উপাদান বানানো হচ্ছে। এটা এক ভয়ংকর সামাজিক ট্যাবু”

তরুণ সমাজকর্মী শহিদ হাসান বলেন— “আমরা চাই বিয়ে যেন সুন্দর, মানবিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যের মধ্যে হয়। ভালোবাসা ও বোঝাপড়া থাকলেই বিয়ে সফল হয়, গয়না নয়।”

তরুণ ইসলামিক আলোচক মাওলানা কাসেম মাহমুদ বলেন-“বিয়ে মানে সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ও পারিবারিক বন্ধন। সোনা বা দামী গয়না কোনো মানুষের নৈতিকতা বা সম্পর্কের মান প্রকাশ করে না। সমাজকে বোঝানো দরকার আসল সৌন্দর্য হলো ভালোবাসা ও বোঝাপড়া।”

বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণী এখন গোল্ড প্লেটেড গয়না বা বিকল্প সাজসজ্জার পক্ষে কথা বলছেন। তাদের মতে, বিয়ের সৌন্দর্য গয়নায় নয়, ভালোবাসা ও বিশ্বাসে।তারা মনে করেন, সময় এসেছে ট্রেন্ড ও কালচার পরিবর্তনের।বিয়ে যেন আর্থিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহজ ও মানবিক সম্পর্কের উৎসব হয়ে ওঠে—এমন পরিবেশ গড়তে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *