আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ১৬ (বাঁশখালী) আসনে নিরবে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে জামায়াত, পুনুরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। এই আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রহীনতা ও ভোটাধিকার হরণের কারণে চট্টগ্রাম-১৬ আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়।
নান্দনিক সৌন্দরর্য্যর বাঁশখালী সবুজে মোড়ানো উঁচু উঁচু পাহাড়, পশ্চিমে বিশাল জলরাশি সমুদ্র বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত এই আসনটি পুনরুদ্ধারে কাজ করছে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের নেতৃত্ব আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে পুনরায় আসনটি বিএনপির হাতে আসবে বলে মনে করেন। তবে এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী, কে পাচ্ছে মনোনয়ন তা এখনও নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও বিএনপির টিকিটে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হন। ২০০৮ সালে সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখনও বাঁশখালী আসনটি হাতছাড়া হয়নি বিএনপির। জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হন।
সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম প্রয়াত হওয়ার পর এই আসনটিতে বেড়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা যেমন আছেন, তেমনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, গন্ডামারা ইউনিয়নের বর্তমান চোয়ারম্যান লেয়াকত আলীও মনোনয়ন চাইছেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম জেলা পিপি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আশরাফ হোসেন রাজ্জাকও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বিএনপি থেকে মনোনয়নের দৌড়ে আরও রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক।
জুলাই অভ্যুত্থানে পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক দল-এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মীর এরশাদুল হক এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। গণ অধিকার পরিষদের দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব এডভোকেট আরিফুল হক তায়েফ এই আসনে নির্বাচন করবেন, তিনি মধ্যে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। দলীয় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটের মাঠে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন । অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে ফেব্রুয়ারীতে প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলামকে।
বাঁশখালী আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও দলীয় সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে তারা ভোটারদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছ।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী জানান, বিগত ১৬ বছর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছি। গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সরকারের রোষানলে পড়েছি। তাই আমি আশা করছি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল আগামী নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেবে। মনোনয়ন পেলে বাঁশখালীর জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
বাঁশখালীর রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় আসছেন আশরাফ হোসেন রাজ্জাক। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পিপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯৮৮ সালে কালীপুর এজহারুল হক স্কুল ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবেই তার ছাত্ররাজনীতি শুরু। বাঁশখালী কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল’ ফ্যাকাল্টি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। আইন পেশা শুরু করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ভোটে জেলা আইনজীবী সমিতির এজিএস নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম বলেন, অতীতে এই জনপদের মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়ে উপজেলার চেয়ারম্যান বানিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে৷ জনগণের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে বাঁশখালীর মানুষ সৎলোককে বেছে নেবেন।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮জন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ১২টি নির্বাচনের মধ্যে এ আসনে আওয়ামীলীগ চারবার নির্বাচিত হয়, ১৯৭৩ সালে শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ১৯৯১ সালে এডভোকেট সুলতানুল কবির চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়। ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ এবং ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ধরে রাখেন। এর মধ্যে দুবার মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন।
বিএনপি এই আসনে প্রথম নির্বাচিত ১৯৭৯ সালে এরপর ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয় দুইবার ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ আসলে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী পরপর দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়।
বাঁশখালীর সাধারণ ভোটাররা মনে করেন একাধিক প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা দেখেই তারা রায় দেবেন।
