দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, রাত পেরোলেই চাকসু নির্বাচন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ইতোমধ্যেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এবারের নির্বাচন ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, প্রতিটি ব্যালটে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড, যা মেশিনে শনাক্ত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬১টি ভোটকক্ষ। প্রতিটি ভোটকক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী, আর হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়বেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে বৃত্ত পূরণ করে ভোট দেবেন; একাধিক বৃত্ত পূরণ করলে সেই ভোট বাতিল হবে।

এবারের নির্বাচনে মোট ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ছাত্রদলের প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, বাম সংগঠনগুলোর দ্রোহ পর্ষদ ও বৈচিত্র্য ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সমর্থিত সার্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ এবং সুফীপন্থী শিক্ষার্থীদের অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য।

নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় তৈরি করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা বলয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে মাঠে থাকবেন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১, হাজার ৫০ জন পুলিশ ও র‍্যাবের সাইকেল ইউনিটের ৪০ সদস্য। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীও সহায়তা দিতে পারে। প্রতিটি ভোটারকে ভোট দেওয়ার আগে তিন ধাপের নিরাপত্তা তল্লাশি পার হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। আর সাংবাদিকদের জন্য গোপন ব্যালট কক্ষ ছাড়া ক্যাম্পাসে অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে।

নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে তিনটি প্রবেশপথ দিয়ে—কাটা পাহাড়, ৩ নম্বর গোডাউন ও শহীদ মিনারের দক্ষিণের আর্চওয়ে। বৈধ বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক; প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে–স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকক্ষে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার সঙ্গে আইডি যাচাই শেষে ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে পাঁচটি ব্যালট পেপার। গোপন কক্ষে নির্ধারিত পেন দিয়ে বৃত্ত পূরণ করতে হবে। নির্বাহী সদস্য পদে সর্বোচ্চ পাঁচটি, হল সংসদে তিনটি ও হোস্টেল সংসদে তিনটি ভোট দেওয়া যাবে।

ভোট শেষে ব্যালট বাক্সে ফেলে বিকল্প পথে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, যাতে ভিড় না হয়। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের ভদ্র আচরণ ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।

ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেন ১১ বার বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর মধ্যে চলাচল করবে। এ ছাড়া চলবে ৩০টি বাস। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে এবং শেষ ট্রেন রাত ১০টা ১০ মিনিটে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে, শেষ ট্রেন রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। নিউমার্কেট ও ষোলশহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১০টি বাস ছাড়াও সকাল ১০টায় আরও ৫টি বাস যোগ হবে। বিকেল ৩টা, ৪টা ও ৫টা ৩০ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে ফিরতি ট্রিপে বাস ছেড়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *