বুটেক্স সায়েন্স ক্লাবের আয়োজনে টেক্সভার্স ২০২৫: টেক্সটাইল গবেষণায় নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টেক্সটাইল উদ্ভাবন ও গবেষণা প্রতিযোগিতা ‘টেক্সভার্স ২০২৫’। দীর্ঘ ছয় বছর পর পুনর্গঠনের পর বুটেক্স সায়েন্স ক্লাব এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

২৪ অক্টোবর, শুক্রবার দিনব্যাপী আয়োজনে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের তরুণ প্রজন্মকে টেক্সটাইল খাতে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীল চিন্তাধারার প্রতি উৎসাহিত করা এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী দক্ষতা বিকাশে সুযোগ করে দেওয়া।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে দেশের প্রায় ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতাটি ছয়টি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হলো—পোস্টার প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্ট এক্সিবিশন, আর্টিকেল রাইটিং, টেক্সটাইল অলিম্পিয়াড (সিনিয়র ও জুনিয়র ক্যাটাগরি), ভিডিও কম্পিটিশন এবং ট্রেজার হান্ট।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউশন অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্টসের (আইটিইটি) সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. এনায়েত হোসেন, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাইদুর রহমান, আইটিইটি’র যৌথ আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এ. টি. এম. শামসুদ্দিন খান, র‍্যাডিক্যাল ডিজাইন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার এ. কে. এম. মোহসিন আহমেদ এবং আরএইচ কর্পোরেশনের নির্বাহী পরিচালক এ. এস. এম. হাফিজুর রহমান নিক্সন।

বিচারকরা অংশগ্রহণকারীদের গবেষণাধর্মী উপস্থাপনা ও উদ্ভাবনী চিন্তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেন। প্রতিটি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ ও দ্বিতীয় রানারআপ ঘোষণা করা হয়।

পোস্টার প্রেজেন্টেশন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে টিম ওয়াটার হায়াসিন্থ, টিম এমিথিস্ট ও টিম ড্রপিং-২।
প্রজেক্ট এক্সিবিশন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে টিম এরিজ, টিম ইকোফ্লেইম পং ও টিম গিয়ার সিফটার্স।
টেক্সটাইল অলিম্পিয়াড (সিনিয়র ক্যাটাগরি) তে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে নাজরানা মেহনাজ দিবা, মো. সাদমান ওয়াসিফ ও ইশতিয়াক আল আমিন।
টেক্সটাইল অলিম্পিয়াড (জুনিয়র ক্যাটাগরি) তে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে চৌধুরী আজমিন মাহমুদ, মো. আবদুন নুর ও মো. নূর হোসেন রাব্বি।
ভিডিও কম্পিটিশন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন ও প্রথম রানারআপ যথাক্রমে টিম স্পানডেক্স ও টিম পেপার উইভার্স।
ট্রেজার হান্ট ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে মিস্ট্রি ভয়েজার্স, দ্য এজওয়াকার্স ও টিম অরাম।

সমাপনী পর্বে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন টেক্সটাইল খাতে গবেষণার গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে গবেষণার পরিমাণ এখনও তুলনামূলকভাবে কম। তাই দেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ রয়েছে, তাদের গবেষণামুখী উদ্যোগে আরও এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ারও আহ্বান জানান।

ক্লাবের মডারেটর ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস. কে. মোহাম্মদ রাফি বলেন, “শিক্ষার্থীদের টেক্সটাইল গবেষণার ক্ষেত্র অন্বেষণে উৎসাহিত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে টেক্সভার্স ২০২৫ আয়োজনের মাধ্যমে। এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা সেই যাত্রার সূচনা করেছি। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রেখে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে এবং তাদের গবেষণামুখী মানসিকতা গড়ে তুলতে চাই।”

ক্লাবের সভাপতি মো. নাহিদ হাসান বলেন, “টেক্সভার্স ২০২৫ আয়োজনের মাধ্যমে বুটেক্স সায়েন্স ক্লাব শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতেও আমরা এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখব।”

দিনব্যাপী উৎসবমুখর এই আয়োজনে বুটেক্স ক্যাম্পাস ছিল প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সৃজনশীল উপস্থাপন ও উদ্ভাবনী মনোভাব আয়োজনে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *