ঋণ করে উন্নয়নের চাপ পড়তে শুরু হয়েছে অর্থনীতিতে। চলতি অর্থবছরে চলমান প্রকল্পে যে পরিমাণ ঋণ এসেছে তার চেয়ে এখন বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। যার ফলে ফলে ঋণ করেই এখন ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ ভেঙে টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসিনা সরকারের আমলে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পেই বেশি ঋণ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প চালু হলেও তা থেকে আশানুরূপ ফলাফল আসছে না। ফলে ঋণ করেই এখন ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বরে) বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ১১৪ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অথচ এই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২৭ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। যেখানে গত অর্থবছরে ১১২ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। যার মধ্যে শুধু আসল পরিশোধই বেড়েছে ১৩ কোটি ডলার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলসহ বেশকিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে আলাদা চাপ তৈরি হয়েছে। অথচ মেট্রোরেল বাদে পদ্মা রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেল থেকে তেমন রিটার্ন আসছে না। যা আয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মেনটেইনেন্সে খরচ হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে নিজের তহবিল থেকে এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ৪০৯ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭৪ কোটি ডলার বেশি। এর আগে কোন অর্থবছরে সরকারকে এত ঋণ পরিশোধ করতে হয়নি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৩৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। মূলত সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৯১ কোটি ৬ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় প্রতিশ্রুতি ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে বাজার-ভিত্তিক ঋণের জন্য উচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতে সিকিউরড ওভার-নাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) বেড়েছে। বর্তমানে এসওএফআর ৫ শতাংশের বেশি যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে ১ শতাংশের এর কম ছিল। আবার বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক ঋণও ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে বাংলাদেশকে এখন সুদ বাবদ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
