‘জুলাইকে বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে ছাত্র উপদেষ্টারা’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মহাসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটির সাবেক এক নেতা মুনতাসির মাহমুদ। সারা দেশের আদালতগুলোতে পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ দেওয়ার নামে আখতার কোটি কোটি টাকা ‘ঘুষ’ নিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।

আখতারের পাশাপাশি বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও তার বড় ভাই মাহবুব আলমের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শুক্রবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিভায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

মুনতাসির মাহমুদের এসব অভিযোগের ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তার লাইভ ভিডিওতে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানান।

মুনতাসির জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

পরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে একদল লোক নিয়ে মগবাজারে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মধ্যে ঢুকে বিক্ষোভ করে চাকরি হারান মুনতাসির মাহমুদ। পরে গত ১২ অক্টোবর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এনসিপি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পরদিনই মুনতাসির মাহমুদ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বড় ভাই মাহবুব আলমের দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। আর এরপর এখন আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তিনি।

মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘আখতার হোসেন সাহসী ছেলে। জুলাই অভ্যুত্থানে তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসিফ নজরুলের মাধ্যমে বিভিন্ন আদালতে পিপি বসানোর নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষ খেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘নরসিংদীতে শিরিন (শিরিন আক্তার শেলী) নামে এক আইনজীবীকে পিপি পদে বসানোর জন্য তারা আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে তদবির করেছিলেন।

কিন্তু তালিকা থেকে আখতার হোসেন এবং তার পিএস শিরিনের নাম কেটে দেন। বারবার তদবির করায় আসিফ নজরুল তাকে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরই তার কাছ থেকে নিজের পিএস আতিক মুন্সির মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন আখতার। আখতাররা আরেক নারীর কাছ থেকে টাকা খেয়ে শিরিন আপার নাম কেটে দিল। অথচ শিরিন আপা ফ্যাসিবাদি আমলে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার ছেলে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছে। কিন্তু আরেকজনের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা পাবে, এজন্য শিরিনের নাম কেটে দিয়েছে।

প্রেস ক্লাবের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুনতাসির বলেন, ‘আখতার বলেছে পিপি বানাইতে ৫০ লাখ টাকা লাগবে। এরপর তার পিএস আতিক মুন্সিকে পাঠাইছে। কিন্তু আসিফ নজরুল তাকে (শিরিন) পিপি বানানোর পর তাকে ফোন দিছে- আপা ৫০ লাখ টাকা লাগব। পিপি বানাই দিছি। শিরিন আপা খুশি হয়ে নিজের গাড়িতে বসে আতিক মুন্সিকে এক লাখ টাকা দিয়ে দিছে। অনেকেই স্বাক্ষী রয়েছে। এক লাখ টাকা দেওয়ায় আখতার রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শিরিন আপাকে আখতার কল দিয়ে বলেন—আতিক মুন্সির কথাই আমার কথা। সে যা বলে সেভাবে করেন।’

দুর্নীতির এসব তথ্য ফাঁস করায় তার নিজের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও জানান মুনতাসির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাইকে বিক্রি করে দিয়েছে ছাত্র উপদেষ্টারা। ডিসি-ওসি থেকে শুরু করে পেট্রোবাংলা, এসেনসিয়াল ড্রাগের এমডি বসানোর নামে শত শত কোটি টাকা নিয়েছে। সব প্রমাণ রয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব দুর্নীতি করেছে বলেও অভিযোগ তুলেন তিনি। বলেন, ‘সে তার দুর্নীতিবাজ ভাইকে দিয়ে দুর্নীতি করাইছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *