ইসির সংলাপ এখনও ডাক পায়নি জাপা ও ১৪ দল শরিকরা

শেষ পর্যন্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের বাদ রেখেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নিয়ে ইসি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও দলগুলোকে সংলাপে ডাকা হচ্ছে না, সেটা এক রকম নিশ্চিত হয়ে গেছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। বুধবার পর্যন্ত চার সংলাপে ৪৮টি নিবন্ধিত দলকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণ পেলেও সংলাপে আসেনি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি। বাকি ৪৭টি দলকে নিয়ে সংলাপ শেষ করেছে ইসি। প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে দুই পর্বে সংলাপ হয়।

ইসিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছে ৫৯টি দল। এদের মধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হয়েছে ফ্রিডম পার্টি, ঐকবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও পিডিপি’র। অর্থাৎ ইসিতে প্রকৃত নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫৫টি। সেই হিসেবে সাতটি দলের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে ইসি’র এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেই। জাতীয় পার্টি ছাড়াও ১৪ দলের ছয় শরিক দলের নাম এই তালিকায় রয়েছে।

দলগুলো হলো—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), তরিকত ফেডারেশন ও গণতন্ত্রী পার্টি। অবশ্য ১৪ দলের শরিক হওয়া সত্ত্বেও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ এরই মধ্যে ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সংলাপ করে এসেছে।

জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের ছয় শরিক দলকে শেষ পর্যন্ত সংলাপের বাইরেই রাখা হবে কী-না, এমন প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে চাইছেন না ইসি’র দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। তবে ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের কাছে ‘৪৮টি দলকে সংলাপে ডাকা হলো, অবশিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে কবে সংলাপ হবে, বা কবে ডাকা হবে’— এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল কমিশন তাদের সঙ্গে হয়েছে। এই মূহুর্তে আর কোনো দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রয়োজন আছে বলে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় না।’

নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেক অংশিজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ইসি। ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সুশীল সমাজ, শিক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং নারী নেতারাসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। তবে নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে আটকে ছিল কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ। নতুন দলের নিবন্ধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পর ১৩ নভেম্বর থেকে দলগুলোর সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত হয়।
এক্ষেত্রে চারদিনে মোট ৪৮টি দলকে আলোচনায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি না আসায় বাকি ৪৭টি দলকে নিয়ে সংলাপ শেষ করেছে ইসি।

কেন এই অনীহা: ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গণঅভ্যুত্থানে পতিত  আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। বিভিন্ন দলের দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি থেকে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে। সে সময় থেকেই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল শরিকদেরও রাজনৈতিক নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি তোলে। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলো, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো এ দাবি জানিয়ে আসছে। কয়েকটি দল তাদের ইসির সংলাপে না ডাকার দাবিতে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি তাদের সংলাপে ডাকার বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে। দলগুলো অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার বিষয়ক আলোচনায়ও ডাক পায়নি।

ইসি সূত্র বলছে, নিবন্ধিত সবগুলো দলকেই সংলাপে ডাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে সে অবস্থান থেকে সরে আসে কমিশন। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওই দলগুলোর কাছ থেকে কোনো মতামত নেওয়ার ‘আপাতত’ কোনো প্রয়োজন দেখছে না। সেটা হলে ৪৮ দলকে নিয়েই শেষ হতে পারে এবারের  সংলাপ। 

সংলাপে কারা ছিল: ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৩ নভেম্বর সংলাপে অংশ নেয়- লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)  বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম- এই ১২টি দল।

১৬ নভেম্বর সংলাপে অংশ নিয়েছে
গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ— মোট ১১টি দল।

১৭ নভেম্বর অংশ নেয় বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও জাকের পার্টি— মোট ১২টি দল।

১৯ নভেম্বর সংলাপে অংশ নেয়
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি–বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)— মোট ১৩টি দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *