‘একইসাথে দল ও রাষ্ট্রপ্রধান– স্বৈরশাসক হওয়ার নতুন নীতি’

মানবাধিকার, সালিশ, বিচার বিভাগ সংস্কার, দুর্নীতি দমন, সংবিধান ও পুলিশ সংস্কার, জুলাই চার্টার্ড, গণভোট, নাগরিক অধিকার এবং প্রাত্যহিক জীবনে প্রাথমিক আইন সচেতনতা সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)।

আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে শুরু হয়ে দুইঘন্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়ে অনুষদ মিলনায়তনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আইন জানো, সংরক্ষণ করো তোমার অধিকার— শীর্ষক সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মোকাররম হোসাইন এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম রনিসহ চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

এ সময় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের বিরোধিতা করা মানে বাংলাদেশকে আবার পেছনের (অন্ধকার) দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। যদি বাংলাদেশকে নতুন করে সংস্কার করা না হয় তাহলে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে সকল স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য হবে। তিনি আরও বলেন, একই সাথে দল ও রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া মানে আবার ডিক্টেটর (স্বৈরশাসক) হওয়ার নতুন নীতি।

মানুষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গ্রামগঞ্জের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষেরা এখন তাকিয়ে থাকে চাকসু, ডাকসু, রাকসু, জাকসু তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী বলছে। তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেই দিকে। তিনি আরো যোগ করেন, আগামী চাকসু নির্বাচনের আগে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের প্রধানদের এক টেবিলে বসিয়ে একটি বিতর্ক আয়োজন করতে পারলে জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেবে কাকে নেতা নির্বাচন করা যায়। এর ফলে আপনারা (চাকসু) অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য সারাদেশে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

স্বাধীন বিচার বিভাগ ও পুলিশ সংস্কার করতেই হবে উল্লেখ করে শিশির মনির আরো বলেন, বিচারককে স্বাধীন এবং পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী থেকে মুক্ত করতে পারলে যতবড় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত মামলা করে বিচার পাওয়া একদম সহজ হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে যাদের সৃজনশীলতা নেই মূলত তারাই বিচার বিভাগ ও পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করে। যার মাথায় ব্রেনের দুর্বলতা আছে মানে আর্গুমেন্টে জোর নেই, সে মাসলে তথা লাঠিয়াল বাহিনীকে ব্যবহার করে। তাই দেশসংস্কারে বলেছি পুলিশকে সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি কমিশন হিসেবে গঠন করতেই হবে, বলেন শিশির মনির।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মোকাররম হোসাইন গ্রাম্য সালিশি প্রক্রিয়া, মিথ্যা মামলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন আইন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমান এবং আগামীর বাংলাদেশের সাহসী তরুণেরা আমার সামনে উপস্থিত রয়েছে। তোমরা যদি তোমাদের অধিকার জেনে সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হও, তাহলে এই বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *