মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির প্রত্যাহারের দাবিতে,পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ অগ্নি সংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ!

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি ঘোষিত দলীয় মনোনীত প্রার্থী,কামরুজ্জামান রতনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে, ঢাকা,মুন্সিগঞ্জ-মুক্তারপুর সড়ক অবরোধ করে, মুক্তারপুর সেতুতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র বিভিন্ন সংগঠন ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রায় দুই ঘন্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে সেতুতে।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তারপুর ফেরিঘাট সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার ফেস্টুন হাতে মিছিল নিয়ে এসে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা।

পরে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হয় মুক্তারপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে,এতে যান চলাচল দীর্ঘ সময় ব্যাহত হয়।

এদিন বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবী জানান বিক্ষুব্ধরা।

এতে অংশনেয় বিএনপির স্থানীয় কয়েক হাজার নেতাকর্মী সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা বিএনপির নেতা কর্মীরা। এ সময় দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ সহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বেশ কয়েকটি গাড়িতে।

পরে আহতদের উদ্ধার করে নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর একই দাবিতে মুন্সিগঞ্জ শহরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মশাল মিছিল বের করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। মিছিলটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এতে যুবদল,ছাত্রদল,স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর থেকে মুক্তারপুর সেতু এলাকায় জড়ো হতে থাকেন মহিউদ্দিন আহমেদ এর সমর্থকরা। সে সময় ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসতে থাকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা।

বেলা তিনটার দিকে পুরো সেতু এলাকায় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময় সেতুর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশ পর্যন্ত বিক্ষুদ্ধরা ছড়িয়ে পড়েন।সেতুর অন্তত ৬ টি স্থানে আগুন জ্বালায় নেতা-কর্মীরা। এতে সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ,গত ১৭ বছর এ আসনে আন্দোলন, সংগ্রাম সংগঠিত করে রেখেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হাই ও তাঁর ছোট ভাই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। সে সময় কামরুজ্জামান মাঠে ছিলেন না। এখন তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় এই আসনের নেতা–কর্মীরা ক্ষুদ্ধ। দ্রুত মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে এ আসনে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা হবে। আন্দোলন সংগ্রামে পুরো মুন্সিগঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান তিনি বলেন,আমাদের দাবি একটাই।এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। যে পর্যন্ত কামরুজ্জামানকে পরিবর্তন করা না হবে, সেই পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।

মিরকাদিম পৌর বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ টাকার বিনিময়ে একটি অযোগ্য লোককে মির্জা ফখরুল নমিনেশন দিয়েছে আমরা দ্রুত এটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

শহর বিএনপির সদস্য সচিব মাহবুব আলম স্বপন জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর মহিউদ্দিন এ আসনের সাধারণ মানুষদের নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। মহিউদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন বঞ্চিত করায় এই আসনের মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। আজকের মুক্তারপুর সেতু অবরোধ করেছে। প্রার্থী পরিবর্তন না হলে আগামীতে এর চেয়ে বেশি কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। 

উল্লেখ্য: গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এরপর থেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মনোনয়ন প্রত্যাশী মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদের অনুসারীরা।

এসব ঘটনা নিশ্চিত করে,জনগণের জানমাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মেনহাজুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *