আমরা ইতোমধ্যে ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি: এনবিআর চেয়ারম্যান

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এম আশঙ্কা আছে।

অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান আরও স্পষ্টভাবে মন্তব্য করেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন এই অর্থনীতিবিদরা।‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু কৃষি ও শিক্ষার মতো খাত পেছনে ফেলে এখন জায়গা এখন নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে বলে জানান আবদুর রহমান খান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকের সংযুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ করা হয়েছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৭৬ লাখ পরিবার আমানত ফেরত পাবেন বলে জনান গভর্নর। এ ছাড়া নতুন ব্যাংকটি প্রথম বা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফার মুখ দেখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *