স্বপ্ন ছুঁয়েছে ঢাকা মেডিকেল, অর্থাভাবেই থমকে মাসুমা

গাঁয়ের মেয়ে হয়েও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মাসুমা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী। ঈর্ষণীয় ফল পেলেও তার ভর্তি এবং ভর্তি পরবর্তী ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইছেন সবার সহযোগিতা ও দোয়া।

দারিদ্র্য নামক অভিশাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া
গাঁয়ের মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম শান্তিরামে এবং সে মহসিন আলী ও মরিয়ম বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়।
মাসুমার শিক্ষাজীবন শুরু উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত ‘শিশু নিকেতনে।’ সেখান থেকে ৫ম শ্রেণি পাশের পর মাঝখানে দুই বছর কাটে তার পার্বতীপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। পরে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পান সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে। সেখান থেকেই ২০২৩ সালের এসএসসি এবং ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন অদম্য এই শিক্ষার্থী।
পরে গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তির সুযোগ পান ঢাকা মেডিকেল কলেজে। যার প্রাপ্ত নম্বর: ১৮৭ দশমিক ২৫ এবং মেরিট পজিশন ৮৫।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাসুমাদের বাড়িতে দুটো রুমের একটি সেমিপাকা ঘর থাকলেও তার ভেতর ও বাইরে দারিদ্র্যের ছাপ যেন অনেকটা স্পষ্ট। কিন্তু সেই দরিদ্র্যতা কিছুতেই পিছু হটাতে পারেনি মাসুমাকে। যখন সে ছোট, ঠিক তখন থেকেই বাবা-মার স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন ডাক্তার হবে। বাবা-মার সেই কথা যেন প্রতিধ্বনিত হতো মাসুমার কানে। বাবা-মার সেই স্বপ্ন পুরণের প্রত্যয়ে এগিয়ে যায় সে। অবশেষে পেয়েছে কষ্টের সেই কাঙ্খিত ফল।
তার সাফল্যের গল্প শুনতে চাইলে মাসুমা ঢাকাভয়েস২৪কে বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা এবং আত্নীয়-স্বজনদের কাছে শুনে আসছি, মেয়েকে একদিন ডাক্তার বানাবো, ডাক্তার বানাবো। তাদের সেই স্বপ্নটাই আমি লালন করেছি।
মাসুমা আরো বলেন, আমি যেভাবে অনেকের সহযোগিতায় এতো দূর এগিয়েছি, একজন ডাক্তার হয়ে আমিও সেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।

এদিকে, মেয়ের এমন কৃতিত্বেও হতাশায় ভুগছেন তার মা মরিয়ম বেগম। তিনি বলেন, খুব কষ্ট করে অপর দুই সন্তানসহ মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। আর্থিক সংকট থাকায় এখন তার ভর্তি ও ভর্তি পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মেয়ে ৮৫তম হলেও খরচের বিষয়টি যেন বিরাট বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাসুমার বাবা মহসিন আলীর। তিনি বলেন, আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেও তিন সন্তানকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে এখন অনেকটাই অসহায়। এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

অশীত কুমার বেনু নামের স্থানীয় এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, মেয়েটির এমন সাফল্যে আমরা সবাই খুশি। আমার বাসায় ছোট একটা ব্যবসা করলেও সময় মতো সেই ভাড়াও দিতে পারেন না মহসিন। মেয়েটির পড়াশোনার বিষয়ে আমি আগেও সহযোগিতা করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে মেয়েটি
হয়তো এ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে।
২০১৭ সালের সমাপনী পরীক্ষায় মাসুমা আক্তার মনিষা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল জানিয়ে উপজেলা পরিষদ শিশু নিকেতনের প্রধান শিক্ষক বলেন, আর্থিক সংকটে ভোগা এই শিক্ষার্থীকে যদি সহযোগিতা করা যায় তাহলে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
মেয়েটি উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত শিশু নিকেতনের শিক্ষার্থী হওয়ায় তাকে সহোযোগিতা করা যায় কি না তা জানতে বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান তুলি বিশেষ কাজে ঢাকায় থাকায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *