চীনের দীর্ঘমেয়াদি ‘জাতীয় পুনরুজ্জীবন’ কৌশলের অংশ হিসেবে অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের ‘মূল স্বার্থ’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। এতে ভারতের এই রাজ্যটিকে তাইওয়ান এবং বড় সামুদ্রিক বিরোধগুলোর সঙ্গে চীনের দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থ’-এর পরিসর বাড়িয়ে এতে তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরে সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক দাবি, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং অরুণাচল প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব লক্ষ্যকে ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহাপুনরুত্থান’ অর্জনের কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা কর্মকর্তারা চীন ও বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ডগুলোর—বিশেষ করে তাইওয়ানের—একীকরণকে জাতীয় পুনরুত্থানের জন্য একটি ‘স্বাভাবিক প্রয়োজন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির অধীনে, পুনরুত্থিত চীন বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো উচ্চতর অবস্থানে কাজ করবে এবং এমন একটি ‘বিশ্বমানের’ সামরিক শক্তি গড়ে তুলবে, যা ‘লড়াই করতে ও জিততে’ সক্ষম হবে; পাশাপাশি সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নস্বার্থ ‘দৃঢ়ভাবে সুরক্ষিত’ রাখবে।
ভারত-চীন সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতীয় নেতৃত্ব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর অবশিষ্ট সংঘাতপূর্ণ পয়েন্টগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি ঘোষণার কথা জানায়। এটি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বৈঠকের দুই দিন আগে ঘটে।
ওই বৈঠকের পর থেকেই সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয়ে মাসিক উচ্চপর্যায়ের সংলাপ শুরু হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে চীন সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের গভীরতা ঠেকাতে চায়। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে ভারত সতর্ক অবস্থান বজায় রাখবে এবং তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সীমিত করে রাখবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি চীন ও পাকিস্তানের গভীরতর সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতার দিকটিও তুলে ধরেছে।
বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে এবং চীনা জে-১০ বহুমুখী যুদ্ধবিমানের একমাত্র ক্রেতা হিসেবেও পাকিস্তান রয়েছে। চীন পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করেছে এবং ইসলামাবাদের প্রধান নৌ-সরঞ্জাম সরবরাহকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখছে—যার প্রতিফলন পাকিস্তানের তিন বিলিয়ন ডলারে আটটি ইউয়ান-শ্রেণির সাবমেরিন কেনার চুক্তিতে দেখা যায়।
অস্ত্র সরবরাহের বাইরে, পেন্টাগনের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, জিবুতির বাইরে বিদেশে ঘাঁটি স্থাপনের বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে পিএলএ সামরিক লজিস্টিক সুবিধার সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে পাকিস্তানকে বিবেচনা করছে চীন।
