জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন সমঝোতা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও তার ৮টি শরিক দলের মধ্যে আলোচনা এখন শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে এখনো স্পষ্ট নয়, শরিকদের জন্য জামায়াত কতটি আসনে ছাড় দেবে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, ৮ শরিকসহ নতুন ২-৩টি সমমনা ইসলামি দল মিলিয়ে মোট ৩৪৮ আসনের দাবি করা হয়েছে। তবে জামায়াত এই দাবি পুরোপুরি গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং সর্বাধিক ছাড় দিতে উদার মন দেখাচ্ছে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগের ৭ দল এবং নতুন ২-৩টি সমমনা ইসলামি দল মিলিয়ে মোট আসনের দাবি ৩৪৮। অথচ সংসদে আসনের সংখ্যা মাত্র ৩০০। আমাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে এবং উদার মন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আশা করি দু-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’
দলের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব যোবায়ের বলেন, ‘কত আসন চাওয়া হয়েছে সেটা বড় বিষয় নয়। আমাদের লক্ষ্য ৮ দলকে বিজয়ী করা। এজন্য যাকে যেখানে দিলে পারদর্শিতা দেখাতে পারে, তাকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমরা নীতিগতভাবে এই সিদ্ধান্তে একমত।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছু বিলম্ব হয়েছে। এতে প্রধান কারণ ছিল শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের লন্ডন সফর, লিয়াজোঁ কমিটির নেতা ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদের ওমরাহ পালন এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শাহাদতের কারণে সময়মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়া।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দু-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। ৮ দল একত্র হয়ে কাজ করছে এবং যাকে যেখানে দিলে ভালো ফলাফল হবে, সেখানে দেওয়া হবে।’
জামায়াতের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, শরিকদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২০টি আসন দাবি করেছে। অন্য ছয়টি শরিক দল খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপি মিলে ১০০টি আসন দাবি করেছে। সব মিলিয়ে ৭টি শরিক দল ২২০টি আসনের দাবি তুলেছে। তবে জামায়াত এই সংখ্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, সম্ভাবনার ভিত্তিতে সমঝোতা হওয়া উচিত। সকল শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের মনোভাব এবং নির্বাচনি সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে আসন বণ্টন করতে হবে। এ ছাড়া দলগুলো মাঠ জরিপের রিপোর্টের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোটের মাঠ জরিপের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে কোন এলাকায় কোন দল বেশি জনপ্রিয় এবং কোন প্রার্থীর নির্বাচনি সম্ভাবনা বেশি দেখাচ্ছে, এই তথ্যই সমঝোতার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে ৩০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে ভোটের মাঠে কাজ শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। পরে ৫ দফার আন্দোলন কেন্দ্র করে আরও সাতটি সমমনা ইসলামি দল জামায়াতের সঙ্গে এক ছাতার তলে আসে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলো একক প্রার্থী দিতে একমত হয়েছে। তবে আসন সমঝোতার বিষয়ে প্রতিটি দল মাঠ জরিপের রিপোর্টের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
