এসপির প্রভাবে কমলনগরে ত্রাসের রাজত্ব ‘হোসেন সমস্যা’

রামগতি-কমলনগর(লক্ষ্মীপুর)প্রতিবেদক: কমলনগরে পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমানের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ‘হোসেন সমস্যা’ নামের এক ব্যক্তি এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষক, জেলে, স্কুলশিক্ষকসহ শতাধিক পরিবার তার দ্বারা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, উচ্ছেদ, হামলা এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করার অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, হোসেন তার দুই মেয়েকে নোয়াখালীর তৎকালীন পিবিআই এসপি ও বর্তমান পঞ্চগড়ের এসপি মো. মিজানুর রহমান মুন্সির বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে পাঠান। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগে তিনি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার মানুষ তাকে ‘অঘোষিত এসপি’ বলে আখ্যায়িত করছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

অভিযুক্ত হোসেন চর জগবন্ধু এলাকার মৃত ইউসুফের ছেলে। বর্তমানে তিনি চর কাদিরা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে বাদামতলি এলাকায় থাকেন। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে প্রায় এক দশক আগে তিনি বাদামতলি এলাকার মোমিন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর জমির ব্যবসার আড়ালে তিনি প্রতারণার জাল বিছিয়ে দেন। তিনি অন্যের জমি ও বসতবাড়ি নিজের বলে বিক্রি করতেন এবং পরবর্তীতে জোরপূর্বক দখল করে ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিতেন।

ভুক্তভোগী কৃষক মো: বেলাল জানান, তিনি হোসেনের কাছ থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ৯৬ শতক জমি কেনার জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বায়না করেছিলেন। কিন্তু জমি বা টাকা কিছুই না পেয়ে আদালতে মামলা করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসপি মিজানুর রহমানের প্রভাবে মামলার তদন্ত রিপোর্ট তার বিরুদ্ধে চলে যায়, ফলে তাকে জেল খাটতে হয়।

যে মোমিন হোসেনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, ৮০ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধও রেহাই পাননি। মোমিন জানান, হোসেন তার বাড়িটি নিজের বলে অন্যজনের কাছে বিক্রি করে তাকে উচ্ছেদ করেছেন। কথা বলার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আরেক ভুক্তভোগী আরজু হাওলাদার বলেন, ২০২০ সালে তিনি একটি জমি কেনার পর ঘর তৈরির জন্য মালামাল রাখেন। কিন্তু হোসেনের বাহিনী তার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসপি মিজানের প্রভাবে তিনি কোনো আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন।

এছাড়াও, শফিক খোনার নামে এক ব্যক্তি জানান, কোরবানির ঈদের দিন তাকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে সারারাত নির্মমভাবে মারধর করা হয়। তার ১৮ হাজার টাকা ও স্বর্ণের আংটি কেড়ে নেওয়া হয় এবং সাদা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এই ঘটনায় মামলা করলেও এসপি মিজানের কারণে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়।

রহিমা বেগম বলেন, হোসেন অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে তার বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে সেই বাড়ি অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি এখন ঘরছাড়া।

চর কাদিরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো: হারুন জানান, হোসেন শত শত মানুষকে হয়রানি করছেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলার আসামি হতে হয়।

কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, হোসেনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার তথ্য ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর। তবে এ বিষয়ে এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

অভিযুক্ত সাবেক নোয়াখালীর পিবিআই এসপি ও বর্তমান পঞ্চগড়ের এসপি মো: মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা থাকলে তা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দেখবে। তবে হোসেনের মেয়ে তার বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে আছে কিনা বা মামলার তদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন কেটে দেন।

হোসেনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগীরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *