জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ১৬ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে একই বিভাগের ৫৩ ব্যাচের ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন— বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. তানভীর রহমান মুন, মো. আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আব্দুল্লাহ আল সাঈদ, মো. আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, এস. এম. মাহামুদুন্নবী, মো. আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহম্মেদ আরেফিন রাতুল, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, মো. মাহামুদুল হাসান ফুয়াদ, মো. আল হাসিব, মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, মো. রাকিবুল হাসান নিবির, মো. জাহিদুল ইসলাম এবং উশান্ত ত্রিপুরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১নং (ছাত্র) হলে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী একই বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং করার ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের নির্দেশক্রমে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮’-এর ধারা ৪-এর (১) (খ) অনুযায়ী অভিযুক্ত ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে রোববার বিভাগটির ৫৩তম ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২১ নম্বর হলের ৪০৩নং কক্ষে জুনিয়রদের র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক-জব্বার চত্বরে ডাকা হয়। পরে তাদের ২১নং হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে ৫৪তম ব্যাচের ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। কক্ষে প্রবেশের পর নবীনদের দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতে বলা হয় এবং কক্ষের দরজা ও জানালাসহ সব আলো নিভিয়ে রাখা হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্ধকার রুমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাদের। এ সময় তাদের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়।

একজন নবীন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম। দরজা বন্ধ, লাইট বন্ধ, সবাইকে সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের মতো দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ কয়েকজন বড় ভাই রুমে ঢুকে লাইট অন করেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম ও ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনকে অবহিত করে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী, আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবরার শাহরিয়ার এবং হলের দুই কর্মচারীসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

তারা জানান, কক্ষটির বাইরে একজন শিক্ষার্থী পাহারারত অবস্থায় ছিলেন। তিনি ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। পরে দরজা-জানালা বন্ধ কক্ষে প্রবেশ করলে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একপাশে রাখা হয়েছে। নবীনরা ভয়ে কোনো কথা বলেনি।

অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা দাবি করেন, ‘নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করছিলাম; পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের একজন তানভীর বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা শুধু নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলছিলাম।’

তবে ২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি, দরজা-জানালা বন্ধ করে জুনিয়রদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তারা ভীত ছিল। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি এবং হল প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *