গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতারা পলাতক থাকলেও, রাজধানীর মিরপুর-১ এর ফুটপাতের অবৈধ দোকানগুলো এখনও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। আর এসব দোকান থেকে ওঠা লাখ লাখ টাকার বড় ভাগ যাচ্ছে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের পকেটে। এমন অভিযোগ ভাসমান ব্যবসায়ীদের। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন শাহ আলী থানা সেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাজু আহমেদ।
সড়ক তো নয়, যেনো বিশাল এক বাজার। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর থেকে শাহ আলী মাজার পর্যন্ত রাস্তার বেশিরভাগ জুড়ে অবৈধ দোকানের রাজত্ব। ফলে হরহামেশাই যানজটে নাকাল এই পথে যাত্রীরা।
একজন বলেন, রাস্তা থাকবে রাস্তার মতন। জনগণ ফুটপাত দিয়ে চলবে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না, যানজট লাগবে না, যানজটের জন্য হাঁটা যায় না।
সড়কে ভাসমান দোকানের বিড়ম্বনায় ভুগছে পাশের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, অবৈধ দোকানগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগের সময়কার প্রভাবশালী নেতা কবির ও জুয়েল বেপারী। ৫ আগস্টের পর কবির পলাতক থাকায়, এখন টাকা ঢোকে জুয়েলের পকেটে।
দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখানে রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল করতে পারে না, শুধু হকার বসে থাকে। তারা ছোট ছোট ভ্যান নিয়ে পুরো রাস্তা আটকে রাখে। আগে কবির নেতৃত্ব দিত এখন জুয়েল নামে একজন আছে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, দুই শতাধিক ভাসমান দোকান থেকে বিদ্যুৎ বিলের নামে প্রতি মাসে তোলা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বছরে যা ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ফুটপাতে বছরে এ বাবদ চাঁদা নেয়া হয় ১৬ লাখেরও বেশি।
একজন ভাসমান ব্যবসায়ী বলেন, আমি ৩টি লাইট চালাই এ জন্য ৬০ টাকা বিল দিতে হয়। আর ফ্যান ও লাইট জ্বালালে ৫০ টাকা নেয়।
ভিডিওতে টাকা তোলার প্রমাণ থাকলেও, অস্বীকার করেন জুয়েল। তার দাবি চাঁদা নয়, ভাসমান দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগের বিনিময়ে দোকানপ্রতি ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি।
শাহ আলী থানার হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. জুয়েল ব্যাপারী বলেন, এটা তো ঠিক আছে অবৈধ। তারা দোকান করছে। আমার পাশে তারা কিভাবে অন্ধকারে দোকান করবে। তারা বাধ্য হয়ে আমাদের কাছে চায় আমরা দেই।
সরেজমিন তথ্য বলছে. মিরপুর-১ সড়কে চাঁদাবাজির অর্ধেক নিচ্ছে সেচ্ছাসেবক দলের শাহ আলী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদও। যে কথা অকপটে স্বীকার করলেন, তিনি।
শাহ আলী থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কোণা থেকে স্মার্ট প্লাজা, ছিন্নমূল আর এই পাশে পেয়েছি স্মার্ট প্লাজা আর বাড্ডা। এই টোটাল কালেকশনে আমরা আছি। আমরা কোনো বিদ্যুৎ ফাঁকি দিচ্ছি না। আছে না চোরা লাইন চালায় বা বিদ্যুৎ দেয় না। আমারা বৈধভাবেই মিটার দিচ্ছি, বিল দিচ্ছি। লস যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই লস যায় না, আল্লাহর রহমতে লাভ হয় ভালো।
কিন্তু, ভাসমান দোকানপাটে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলো কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকোর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হয়নি কেউ।
মিরপুরে সড়কে অবৈধ দোকানে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে, একরকম অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শাহ আলী থানা পুলিশ।
শাহ আলী থানার এস আই বলেন, আমাদের চোখে পড়েছে, আমরা উঠাতে গেলে এখন মাইর খেতে হবে। আমরা কারো কাছ থেকে এক পয়সাও নেই না, আমরা কাউকে বসতেও বলি না উঠতেও বলি না।
কেবল মিরপুর-১ নয়, আশপাশের বিভিন্ন সড়কে শত-শত অবৈধ দোকান বসিয়ে চলছে চাঁদাবাজি।

 
			 
			 
			