জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের ভাষণে একই দিনে গণভোট দেয়ার ঘোষণায় সংকটমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত জানায়, আশা আমরা করেছিলাম সেই সংকটটাই রয়ে গেল। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রশ্নে আমাদের যে ঐকমত্য ও প্রচেষ্টা সেখানে একটি সংকট রয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার দলের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মৌলিক অনেক কথা তুলে ধরেছেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক যে সংকট, বিদ্যামান রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে একটি নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর উদ্দেশ্যে যে সংস্কার প্রস্তাব যেটাকে জুলাই চার্টার বলা হয়, সেই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে একটি গণভোট আয়োজনের যে গণদাবি, তারপর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জনগণ অব্যাহত রেখেছে, আন্দোলন করছেন, সভা সমাবেশে ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ সেগুলো আমরা প্রকাশ ও প্রচার অব্যাহত রেখেছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে এই সংকটের নিরসন হবে। জাতি সেই আশায় অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু আমরা তার ভাষণে যে বিষয়গুলো পেলাম তিনি জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এবং রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের প্রচেষ্টায় যে সংস্কারগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল তার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন যে আদেশ এই বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছেন। সে আদেশ জারি করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সেটির গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, গণভোট প্রসঙ্গে জনগণের অভিপ্রায় এবং গণদাবিকে উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা দিয়েছেন। জামায়াত এখান খুবই পরিষ্কার করে বলছে যে, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, জনগণের যে অভিপ্রায় ছিল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে কি কি বিষয় সংস্কার হলো, নতুন প্রস্তাবিত জুলাই চার্টারের ভিত্তিতে সংবিধানের কি কি সংশোধনী প্রস্তাব যাচ্ছে, যে ৪৮টি প্রস্তাবে আমরা সর্বসম্মত হয়েছি, এগুলো জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জাতিকে জানাতে হবে। ভোটাররা জানবেন তারপর মাইন্ডসেট হবে তারপর ‘হ্যাঁ বা না’ মতামত দেবেন। একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোটাররা জুলাই চার্টার সম্পর্কে অবহিত হয়ে তিনি ‘হ্যাঁ বা না’ ভোট দেবার পূর্বে সেটা বুঝবেন। অথচ একই দিনে তাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আবার একটি প্রতীকে ভোটও দিতে হবে। এটি একটি সংকট তৈরি করবে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার অনুরোধ করেছি যুক্তি দিয়েছি, এটাও আমরা বলেছি যে বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সেটি কেয়ারটেকার হোক বা অন্য প্রত্যেকটি নির্বাচনে কিছু কিছু ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে। দু-পাঁচটা কেন্দ্র বন্ধ, স্থগিত হয়ে যায়। একই দিনে ভোট হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের ভোট বন্ধ হয়ে গেল সেদিন গণভোটের দশা কী হবে? এর কোনো জবাব নেই।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, জুলাই সনদে ১২ কোটি ভোটার কি কি বিষয়ে ‘হ্যাঁ বা না’ বলবে -জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে সেটি জানতে হবে, স্ট্যাডি করতে হবে। ইলেকশন কমিশন সেটি পাবলিক করবেন ওয়েবসাইটে দেবেন তারপর না তিনি(জনগণ) এমন ক্রিটিক্যাল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অথচ সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একই দিনে দিতে গিয়ে সংকটে ফেলে দেয়া হলো।
তিনি বলেন, যে সংকট নিরসনে জামায়াতসহ আটটি ইসলামী সমমনা দল দাবি করে আসছি গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে। তাহলে এটার আইনি ভিত্তিটা দৃঢ় হবে। এটা নিয়ে পরবর্তীতে আদালত এবং আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। সেই সংকট কিন্তু রয়েই গেল। নিরসন হলো না।
