ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক জোট ও আসন সমঝোতার চিত্র দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। বিএনপি এরই মধ্যে নিজ দল ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড় দেওয়া আসনে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এ অবস্থায় তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির সঙ্গে জোটে যাচ্ছে—এমন আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা আর থাকছে না। বরং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেই আসন সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে এনসিপি।
এনসিপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, দুই দলের শীর্ষ নেতাদের একাধিক বৈঠকে নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। গত বুধবার জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দুদফা বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। বৈঠকে জোট গঠনের বিষয়টি এড়িয়ে মূলত আসন সমঝোতার দিকেই অগ্রগতি হয়েছে। সংস্কার, বিচারসহ কয়েকটি মৌলিক ইস্যুতেও দুই পক্ষের মধ্যে মিল পাওয়া গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আসন সমঝোতা হলে এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনের নিশ্চয়তা চেয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৩০টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব উঠে আসে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও ৩০ থেকে ৫০টি আসন ছাড়ের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। এসব আসনে এনসিপির বর্তমান জোটসঙ্গী আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থীরাও থাকতে পারেন।
এনসিপির এক নেতা বলেন, খুব শিগগিরই আসন সমঝোতা বা জোটের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। তিনি জানান, বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় এনসিপির অনেক নেতাই আগ্রহী ছিলেন। তবে বিএনপি ইতোমধ্যে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা করায় সে সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে গেছে। আপাতত জামায়াতের সঙ্গেই নির্বাচনী ঐক্যে পৌঁছানোর বিষয়টি সামনে এসেছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, এনসিপির ভেতরে ও বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি বা জামায়াত—দুই পক্ষের সঙ্গেই সমঝোতার সুযোগ আছে। খুব দ্রুত সব বিষয় স্পষ্ট হবে।
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা হলে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঝুঁকি কমবে এবং আসনের নিশ্চয়তাও তুলনামূলক বেশি থাকবে। এ জোটে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হতে পারে, যা চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সমন্বিত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, আসন সমঝোতা হলেও এনসিপি নিজেদের প্রতীক ‘শাপলা কলি’তেই নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছে দলটি। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কোনো অবস্থাতেই এনসিপির প্রার্থীরা অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন না। সমঝোতা হলেও শাপলা কলি প্রতীকেই ভোটের মাঠে থাকবে এনসিপি।
