বিএনপির সঙ্গে জোট না হলেও আসনভিত্তিক সমঝোতা হতে পারে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানিয়েছেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি—উভয় দলের প্রার্থীরাই ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ অবস্থায় একবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলে আনুষ্ঠানিক জোট গঠনের আর সুযোগ থাকে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে জিএম কাদের জানান, জোট না হলেও আসনভিত্তিক সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে যেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তুলনামূলক দুর্বল, সেখানে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। একইভাবে, যেসব আসনে জাতীয় পার্টির শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে, সেখানে বিএনপি সমর্থন দিলে এবং প্রার্থীরা জয়ী হলে—এমন সমঝোতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দুই পক্ষের আগ্রহ থাকলে এবং জাতীয় পার্টির জন্য বিষয়টি সুবিধাজনক মনে হলে এ ধরনের আসনভিত্তিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রংপুর নগরীর স্কাইভিউ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ। এখন পর্যন্ত ভালো নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জানান, জাতীয় পার্টির তিনজন সংসদ সদস্য প্রার্থী বর্তমানে জেলে রয়েছেন। তারা জামিনে মুক্ত হলে আবারও জুলাইয়ের একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টিই একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং এই আন্দোলনকে দলীয়ভাবে রেজুলেশন করে সমর্থন দিয়েছে। অথচ সেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের হত্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন, প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে জামিন দেওয়া হবে না। এটি হলে তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া প্রশাসন ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জুলাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সময় দিচ্ছে না, অথচ অন্য দলের সঙ্গে দিনে দুইবার করে কথা বলছে নির্বাচন কমিশন।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র অত্যন্ত জটিলভাবে তৈরি করা হয়েছে। এতে বেশিরভাগ নতুন প্রার্থী ভুল করতে পারেন এবং পরবর্তীতে তারা নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। জাতীয় পার্টির আশঙ্কা, বেআইনিভাবে তাদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়াকে আইনসঙ্গত করতে কমিশন বা সংশ্লিষ্টরা এ পন্থা অবলম্বন করতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনে তারা কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখছেন না। সব সময়ই তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, এখনো হচ্ছেন। তবে এই নির্বাচনকে তারা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি তারা প্রতি মুহূর্তে জনগণকে জানাবেন। জনগণই তাদের বড় শক্তি এবং জনগণই তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, দেশে আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি সব সময় নির্যাতিতদের পক্ষে থাকে। নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলার কারণেই তারা জাতীয় পার্টিকে সমর্থন করতে পারে। আওয়ামী লীগের সদস্যরাও মানুষ এবং তারা দেশের ভোটার। তারা দলের সদস্য হতে পারে, কিন্তু তারা দেশের নাগরিক। জামায়াত ও বিএনপি উভয়ই প্রকাশ্যে তাদের ভোট নেওয়ার কথা বলছে। অথচ জাতীয় পার্টি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। এরপরও ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের বড় একটি ভোটব্যাংক লাঙ্গলের পক্ষে যেতে পারে। তাদের ভোট পাওয়া কি জাতীয় পার্টির অপরাধ হবে? তারা তো দেশের নাগরিক, তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *